স্বাস্থ্য বীমা কি | স্বাস্থ্য বীমার প্রয়োজন কি | কোথায় করবেন?

স্বাস্থ্য বীমা কি কেনো সকলের জন্য স্বাস্থ্য বীমা প্রয়োজন অনেকেই এই প্রশ্নটী ক্রে থাকেন। বা জানতে চান কোথায় করবেন কিভাবে করবেন? বাংলাদেশে কি স্বাস্থ্য বীমা বা Health Insurance করা যায়।

হ্যা স্বাস্থ্য বীমা করা এখন সময়ের দাবী উন্নত দেশে বীমা জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এটার প্রচার বা প্রসার তেমন দেখা যায়না। আজকের এই লেখায় স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ভালো করে জানতে লেখাটি অবশ্যই পুরোটা পরবেন।

স্বাস্থ্য বীমা কি?

একজন ব্যক্তির অসুস্থ্যতার ধরুন চিকিৎসা ব্যয় বহন করবার জন্য বীমা কোম্পানীর সাথে যে চুক্তি করা হয়ে থাকে, সেটাই মূলত স্বাস্থ্য বীমা। সাধারণ চিকিৎসা ব্যয় থেকে শুরু করে বড় ধরণের রোড অ্যাক্সিডেন্টসহ আরো নানা রকম চিকিৎসার ব্যয় এ বীমার মাধ্যমে বীমা কোম্পানি বহন করে থাকে। তবে, চুক্তির ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসার পুরো খরচ, অর্ধেক কিংবা একটা নির্দিষ্ট অংশের দায়িত্ব নেয়াও এ বীমার অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

কোন ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ মেটানো, স্বাস্থ্যসেবার সামগ্রিক ঝুঁকি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, একজন বীমাকারী বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বীমা যেমন মাসিক প্রিমিয়াম অথবা পে রোল ট্যাক্স, যা বীমার চুক্তি অনুযায়ী তার স্বাস্থ্য সেবার জন্য জরুরী অবস্থায় চিকিৎসা জন্য প্রয়োজনীয় খরচ যোগাবে এবং অসুস্থতায় আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করবে।

আমেরিকার স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য বীমা হচ্ছে অসুস্থতা কিংবা আহত অবস্থায় প্রাপ্ত চিকিৎসা খরচ যোগায় এমন পলিসি। যার ভেতর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরন, চিকিৎসা খরচ, প্রতিবন্ধিত্ব অথবা দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কারনে ক্ষতিপূরন প্রদান ।

স্বাস্থ্য বীমা কেনো প্রয়োজন?

স্বাস্থ্য বীমা বা হেলথ ইনস্যুরেন্স একধরণের বীমা পলিসি যার মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত অসুস্থতা রোগ, কিংবা যেকোন দুর্ঘটনার চিকিৎসার বিপরীতে আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। তার মানে দাঁড়ায়, স্বাস্থ্য বীমাগ্রহীতা তার চিকিৎসা ব্যয়ের বিপরীতে নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা বা খরচকৃত অর্থ ফেরত পায় যা বীমা পলিসি দ্বারা নির্ধারিত করা থাকে।

সবারই স্বাস্থ্য বীমা থাকা উচিত তার কারণ এর অনেকগুলো উপকারিতা আছে, যার কয়েকটি নিচে দেওয়া হল।

  • অনাকাঙ্খিত অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার বিপরীতে স্বাস্থ্য বীমা অর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে যার ফলে আপনি যেকোনো বিপদের মুহূর্তে আর্থিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন।
  • স্বাস্থ্য বীমা করা থাকলে আপনি উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবেন কারণ স্বাস্থ্য বীমা আপনাকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করছে যার ফলে সেই চিকিৎসা খরচ বহন করা সহজ হয়।
  • স্বাস্থ্য বীমা করা থাকলে আপনাকে চিকিৎসা ব্যয় করার জন্য সঞ্চিত অর্থ খরচ করা লাগবে না, এবং আপনি চিকিৎসা ব্যায়ের চিন্তা থেকে চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন।
  • স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে আপনি খুব অল্প পরিমান প্রিমিয়াম জমাদানের বিনিময়ে বড় অংকের আর্থিক সুরক্ষা নিতে পারবেন, তাই আপনার চিকিৎসা ব্যয় এর পরিমান কমে যায় কারণ বীমা দাবির মাধ্যমে আপনি খরচকৃত অর্থ ফেরত বা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে পেতে পারেন। 

উপরের উল্লেখিত কারন ছাড়াও আরও অনেক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে আপনার বীমা করা উচিত। অল্প টাকা প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি চিকিৎসা সেবায় আর্থিক সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিম, স্কিমের প্রকার, মাসিক চাঁদা, মাসিক পেনশন কত ও অন্যান্য

বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য বীমা ও পলিসির ধরন

বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে খুব বেশি যুগোপযোগী স্বাস্থ্য বীমা তেমন পাওয়া যায় না, তার পরেও এখন যেই ধরণের পলিসি গুলো প্রচলিত আছে এবং এবং কি সেবা অফার করে তার বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল-

১। দুরারোগ্য ব্যাধি পলিসিঃ

গুরুতর স্বাস্থ্য ব্যাধির পলিসি গুলোতে সাধারণত কিছু সুনির্দিষ্ট দুরারোগ্য রোগের জন্য বীমা কোম্পানি সুবিধা দিয়ে থাকে (যেমন ক্যান্সার, হার্ট এটাক, স্ট্রোক, করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ইত্যাদি) হলে এককালীন বড় অংকের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়। পলিসির ধরন ভেদে এই টাকার অংক রোগ নির্ণয় হলে নির্দিষ্ট পরিমানে পাওয়া যেতে পারে, আবার চিকিৎসা খরচের বিপরীতে ফেরত প্রদানের নিয়মেও বীমা হতে পারে।

যেহেতু এই স্বাস্থ্য বীমা বা হেলথ ইনস্যুরেন্স শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু গুরুতর ব্যাধির জন্য কাজ করে, তাই এটিকে গুরুতর ব্যাধির (ক্রিটিকাল ইলনেস) পলিসি বলা হয়ে থাকে। এই ধরণের পলিসির প্রিমিয়াম সাধারণত খুবই কম হয় এবং অনেক সময়ই এটা আপনার জন্য বিশাল উপকারী হতে পারে। 

মাঝে মধ্যে দুরারোগ্য ব্যাধির কভারেজটি হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি বা হাসপাতাল ক্যাশ পলিসির সাথে যুক্ত থাকে। যেন আপনি একটি পলিসিতেই সব ধরণের কভারেজ পেয়ে যান। অন্যথায়, আপনি চাইলে অন্য স্বাস্থ্য বীমার সাথে দুরারোগ্য ব্যাধির একটি আলাদা পলিসি করে রাখতে পারেন যাতে জরুরি মুহূর্তে আপনি আর্থিক ভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।

২। হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি

আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত স্বাস্থ্য বীমা পলিসি হচ্ছে হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য নিয়ে থাকে। এই ধরণের পলিসিগুলোতে সাধারণত একটি বাৎসরিক মোট বীমা অংক (সর্বমোট কভারেজ) নির্ধারণ করা থাকে এবং বীমাগ্রহীতা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়ের বিপরীতে এই অংক পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ ফেরত পান।

মাঝে মধ্যে এই পলিসিগুলোতে জীবন বীমা এবং  বহির্বিভাগের চিকিৎসা যেমন- আউটডোর ভিসিট, টেস্ট, ইত্যাদি কভারেজ যুক্ত থাকে যাতে আপনার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। যেমন ধরুন, আপনার একটি হাসপাতাল রি-ইমবার্সমেন্ট পলিসি আছে যাতে সর্বমোট ৬০ হাজার টাকার বাৎসরিক বীমা কভারেজ আছে। হঠাৎ আপনার অকস্মাৎ অসুস্থতায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেল। এই ক্ষেত্রে আপনি বীমা দাবি করে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন।

কিছু কিছু চিকিৎসা ব্যয় পলিসিতে কভার নাও করতে পারে যেমন- ডিসপোসেবল আইটেম, ভিসিটরের খাবার ইত্যাদি, সেক্ষেত্রে ঐ খরচগুলো আপনাকে বীমা কোম্পানি প্রদান করবে না। সেজন্য, যেকোনো স্বাস্থ্য বিমা পলিসি নেওয়ার আগে, সেই বীমা কোম্পানির শর্ত সমূহ জেনে নেওয়া উত্তম।

এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা জরুরি যে, বীমা দাবি বা ইনস্যুরেন্স ক্লেইম উত্থাপন করা হলে দাবিটি আপনার চিকিৎসা ব্যয়ের খরচের উপরে নিস্পত্তি করা হবে। তাই চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্ট এবং বিল সমূহ যত্ন সহকারে সংগ্রহ করে বীমা দাবির সাথে প্রদান করতে হতে পারে।

 ৩. হাসপাতাল ক্যাশ পলিসি

হাসপাতাল ক্যাশ বা (হসপিক্যাশ) বীমা কোম্পানি দারা প্রদত্ত আরেকটু সহজ ধরণের স্বাস্থ্য বীমা পলিসি যার মাধ্যমে বীমা গ্রহীতা হাসপাতালে চিকিৎসার বিপরীতে দৈনিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। এই ধরণের পলিসিতে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় কত টাকা হয়েছে সেটার বিপরীতে বীমা দাবি নিস্পত্তি করা হয় না। তার বদলে, কত দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তার বিপরীতে প্রতিদিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রায়শই এই ধরণের পলিসিগুলোর সাথে জীবন বীমা ও বহির্বিভাগের চিকিৎসা ব্যয়ের কভারেজ থাকে এবং এই ধরণের পলিসিগুলোর প্রিমিয়ামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। 

যেমন- ধরুন, আপনার হাসপাতাল ক্যাশ পলিসিতে হাসপাতালে উপযুক্ত কারণে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রতিদিনের জন্য ৪,০০০ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এবং হঠাৎ আপনার অসুস্থতার কারণে ৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হল। এই ক্ষেত্রে, আপনার হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় যত টাকাই হোক না কেন, আপনি সর্বোচ্চ ১২,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

এই রকমের পলিসিগুলোতে সাধারণত কিছু সুনির্দিষ্ট রোগের কভারেজ থাকে না এবং বীমা দাবি করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু দিন অপেক্ষা করতে হয়। তাই, স্বাস্থ্য বীমা পলিসি করার আগে এই বিষয় গুলো ভালো করে লক্ষ্য করা উত্তম। 

বাংলাদেশে কোন কোন বীমা কোম্পানিতে স্বাস্থ্য বীমা করা যায়?

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ IDRA বাংলাদেশ এর অধীনে এই আর্টিকেল লেখার সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৮০ টি বীমা কোম্পানি বীমা সেবা দিচ্ছে যার মধ্যে ৩৪ টি লাইফ বীমাকারী কোম্পানি এবং ৪৬টি নন-লাইফ বীমাকারী কোম্পানি। তার মধ্যে ৩২টি কোম্পানি স্বাস্থ্য বীমা দিয়ে থাকে। সেখান থেকে জনপ্রিয় কয়েকটি কোম্পানি নিচে দেওয়া হল-

উপরের উল্লখিত বীমা কোম্পানি স্বাস্থ্য বীমার জন্য জনপ্রিয় এছাড়াও আরও অনেক বীমা কোম্পানি আছে আপনি চাইলে তাদের মধ্যে যেকোন কোম্পানি তে বীমা গ্রহন করতে পারেন। তবে অবশ্যই যাচাই বাচাই করে বীমা গ্রহন করবেন।

শেষকথাঃ

একজন ব্যক্তি যদি অসুস্থ্য হওয়া ছাড়াও প্রায়ই ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকেন, তবে তার অসুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবণা অনেকাংশেই কমে যায়। সুতরাং, বলাই যায় সুস্থ্য থাকার জন্যে স্বাস্থ্য বীমা প্রয়োজন, তেমনই অসুস্থ্য হলেও চিকিৎসার জন্যে এই বীমার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের সকলের উচিত স্বাস্থ্য বীমা করা। যেনো অসুসস্থতায় আর্থিক সুরক্ষা মিলে।

আশাকরি আজকের লেখা থেকে বুঝতেই পারছেন, স্বাস্থ্য বীমা কি কেনো। কোনকিছু বোঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি চেস্টা করবো সঠিক তথ্য প্রদান করতে।

Leave a Comment