সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) বাংলাদেশ সরকারের তফসিলিভুক্ত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। যেখানে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিস থাকেনা, সেখানে সোনালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন আইন ১৯৭২ সালের আইন অনুযায়ী। এই ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৬ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪১৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত।
সোনালী ব্যাংকের সুইফট কোড BSONBDDH
সোনালী ব্যাংকের কার্যাবলী
- সোনালী ব্যাংকের কার্যাবলী
- সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি
- সোনালী ব্যাংকের শাখা কয়টি?
- সোনালী ব্যাংকে ই-সেবা
- সোনালী ব্যাংকে ডিপিএস সেবা
- সোনালী ব্যাংক লোন কীভাবে করবেন?
- সোনালী ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি
- সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
- সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার
- তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
- সোনালী ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট রেট
- শেষকথা
প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানত গ্রহণ করে, সেই অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে অর্থ উপার্জন করে। অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করে। পরবর্তীতে সেই অর্থ বড় বড় শিল্পপতিকে ঋণ দিয়ে থাকে।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো সুদের ব্যবসা করার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন সেবাদান ক্ষেত্রে অর্থ প্রদান করে আসছে।
প্রতিটি রাষ্ট্রীয় সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়ন সাধনের উপর লক্ষ্য করে। ঠিক তেমনি সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) লিমিটেড বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে গত কয়েক যুগ থেকে সর্বক্ষেত্রে আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করে আসছে।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) জনসাধারণকে তাদের আমানতকে সঞ্চয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আমানত প্রোডাক্ট প্রবর্তন করে আসছে। কৃষি ও শিল্প প্রকল্প ঋণ, আমদানী- রফতানী ঋণ, কৃষিঋণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ, এসএমই ঋণ, ভোগ্যপণ্য ঋণসহ বিভিন্ন ঋণ স্কীমের মাধ্যমে শহর ও গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণকে সহায়তা প্রদান করে আসছে। ফলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বড় অবদান রাখছে সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) লিমিটেড।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank), যেসব স্থানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেসব স্থানে সরকারের পক্ষে সরকারি ট্রেজারী কার্যক্রম পরিচালনা করে। সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে অনবরত সেবা প্রদান করছে। পাশাপাশি এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুপস্থিতিতে অন্যান্য ব্যাংকের নিকাশঘর হিসেবে কাজ করে থাকে।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড বিভিন্ন প্রকারের সেবা প্রদান করে থাকে। যেসব সেবা সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) কর্তৃক দেওয়া হয়, সেসকল সেবা নিচে দেওয়া হলো-
- সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও অবসরভাতা প্রদান।
- সরকারী ও বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান।
- ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান।
- সামাজিক নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন ভাতা প্রদান।
- সরকারি সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয়।
- সরকারি খাদ্যশস্য ক্রয় বিল পরিশোধ।
- বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বিল গ্রহণ।
- সরকারি রাজস্ব আদায় কার্যক্রম।
- হজ্জ্ব ও জাকাত ফান্ডের অর্থ গ্রহণ এবং
- সামাজিক কর্মকান্ডের (CSR) মাধ্যমে আপামর জনগোষ্ঠীকে সহায়তা।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) উপরের আলোচিত সেবা ছাড়াও আরো অনেক ধরণের সেবা প্রদান করে থাকে। এই বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ জনসাধারণের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি
অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) পরিচালনার জন্য কিছু নিয়ম আছে। ব্যাংকটি ৮ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ ও একটি দক্ষ পরিচালনা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম। তাছাড়া এই ব্যাংকটি পরিচালনা করার জন্য বর্তমানে সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) লিমিটেডে মোট ১৮,১৬৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। এর মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা ১৭,৪০৬ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ১৪০০ জন। এই বিপুল সংখ্যক জনবল নিয়ে ব্যাংক ব্যবসার উন্নয়ন এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) অংশগ্রহন করে আসছে গত কয়েক দশক থেকে।
সোনালী ব্যাংকের শাখা কয়টি?
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে সোনালী ব্যাংকের ১২২৮ টি শাখা রয়েছে। বিদেশে রয়েছে দুইটি শাখা। এর মধ্যে দুইটি শাখাই ভারতে অবস্থিত। একটি শাখা কলকাতায় অবস্থিত এবং অপরটি শিলিগুরিতে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ১২২৮টি শাখার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৭২৭টি এবং শহরে রয়েছে ৫০১টি শাখা। নিচে কোথায় কয়টি শাখা রয়েছে তার একটি লিস্ট দেওয়া হলো-
- বৈদেশিক শাখা ২ টি
- স্থানীয় শাখা ১২২৮ টি
- প্রিন্সিপাল অফিস ৬৬টি
- প্রধান কার্যালয় ১টি
- জিএম কার্যালয় ১৫টি।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) অফলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও রয়েছে। অনলাইন ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১২২৮টি অনলাইন শাখার মধ্য দিয়ে। অনলাইন ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা ২২৪৪৬ জন।
সোনালী ব্যাংকে ই-সেবা
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) গ্রাহকদেরকে ই-সেবা প্রদান করার জন্য ৩ জুন ২০২০ সালে একটি অ্যাপ চালু করে। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে সাধারণ জনগণ ব্যাংক একাউন্ট করার জন্য ব্যাংকে যেতে হবেনা। এই ইলেক্ট্রনিক অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ব্যাংক একাউন্ট চালু করতে পারবেন। সোনালী ব্যাংকের এই ই-সেবাটির নাম “সোনালী ই-সেবা”।
সোনালী ই-সেবা অ্যাপটি ব্যবহার করে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই আপনি অ্যাকাউন্ট খোলা ও চালু করতে পারবেন। এজন্য গ্রাহকেরা ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্যের বিবরণী অ্যাপসে দিলেই আইসিটি বিভাগের ‘পরিচয়’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সার্ভার থেকে সেগুলো যাচাই করে নেওয়া যাবে।
যেহেতু সকল প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক তাই এসব একাউন্ট যাচাই করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কার্যালয়ের ডাটাবেস থেকে তথ্যগুলো যাচাই করে নেওয়া হয়। সেই সাথে অন্যান্য তথ্যগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল আর্কিটেকচারের সাথেও মিলিয়ে নেওয়া হবে।
এই অ্যাপটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) এই অ্যাপ দিয়ে শুধু সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতার ভাতাভোগী (বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ইত্যাদি), গার্মেন্টস শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, কৃষক, ট্যাক্সি ড্রাইভার, মৎসজীবী, চাকরিজীবী (বেতন), পেনশনভোগীসহ সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে।
প্রাথমিক ধাপ পেরিয়ে গেলে, পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের বাকি সেবাগুলো অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এই অ্যাপটি শুধু গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, ভবিষ্যতে আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ প্রকাশ করা হবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সোনালী ব্যাংকে ডিপিএস সেবা
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) তাদের গ্রাহকদেরকে ডিপিএস সেবা প্রদান করে। বিভিন্ন মেয়াদে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ডিপিএস সেবা দিয়ে আসছে। এই ব্যাংকটি বিভিন্ন মেয়াদে ডিপিএস সেবা দিয়ে থাকে। নিচে সোনালী ব্যাংক ডিপিএস সম্বলিত সকল তথ্য আলোচনা করা হলো।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) আমানত সঞ্চয়ের জন্য বিভিন্ন প্রকারের স্কিম চালু করেছে। ৩ বছর থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত আমানত সঞ্চয়ের জন্য স্কিম চালু করা হয়েছে।
সোনালী সঞ্চয় স্কিম
৫ বছর মেয়াদী স্কীমকে সোনালী সঞ্চয় স্কিম বলে। এই স্কিমের ক্ষেত্রে আমানত সঞ্চয়কারীকে ৫০০ টাকা অথবা ৫০০ এর গুনিতক হারে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। সোনালী সঞ্চয় স্কিমে ৬.৬৫% চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম
শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম মূলত ১০ বছরের জন্য করা হয়ে থাকে। এই স্কিমের ক্ষেত্রে আমানত সঞ্চয়কারীকে ৫০০ টাকা অথবা ৫০০ এর গুনিতক হারে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। সোনালী সঞ্চয় স্কিমে ৬.৬৫% চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম
চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম মূলত ১০ বছরের জন্য করা হয়ে থাকে। এই স্কিমের ক্ষেত্রে আমানত সঞ্চয়কারীকে ৫০০ টাকা অথবা ৫০০ এর গুনিতক হারে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। সোনালী সঞ্চয় স্কিমে ৬.৬৫% চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
পল্লী সঞ্চয় স্কিম
পল্লী সঞ্চয় স্কিম ৭ বছর মেয়াদী সঞ্চয় স্কিম। এই স্কিমের আওতায় মাসিক কিস্তি যথাক্রমে ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা। ব্যাংক পল্লী সঞ্চয় স্কিমে ৬.৫০% চক্রবৃদ্ধি মুনাফা হারে সুদ প্রদান করে থাকে।
বিবাহ সঞ্চয় স্কিম
বিবাহ সঞ্চয় স্কিমে মাসিক কিস্তি যথাক্রমে ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০, ২০০০, ৩০০০, ৪০০০,৫০০০,৬০০০,৭০০০, ৮০০০, ৯০০০ এবং ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিবাহ সঞ্চয় স্কিমের আওতায় আমানতকারীকে ৬.৫০% চক্রবৃদ্ধি মুনাফা হারে সুদ দিয়ে থাকে।
অনিবাসী আমানত স্কিম
অনিবাসী আমানত স্কিমের ভেতরে রয়েছে ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয় স্কিম সুবিধা। যেখানে আপনি ৭% চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা পাবেন। প্রতিমাসে মাসিক সঞ্চয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০০০,৬০০০,৭০০০, ৮০০০, ৯০০০, ১০০০০, ১১০০০, ১২০০০, ১৩০০০, ১৪০০০, ১৫০০০ টাকা।
সোনালী ব্যাংক অবসর সঞ্চয় স্কিম
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) অবসর সঞ্চয় স্কিমের জন্য সরল হার ০৩ থেকে ১৫ বছর মেয়াদী ৮.০০% হারে সুদ প্রদান করা হয়। ‘
সোনালী ব্যাংক মিলিওনিয়ার স্কিম
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) মিলিওনিয়ার স্কিমের আওতায় বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন হারে মুনাফা প্রদান করে থাকে। যদি আপনি ০৪ থেকে ০৮ বছর মেয়াদী স্কিম চালু করেন, তাহলে আপনি ৬.০০% চক্রবৃদ্ধি হারে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। যদি আপনি ০৯ থেকে ১৪ বছর মেয়াদী স্কিম চালু করেন, তাহলে আপনি ৬.৫০% চক্রবৃদ্ধিহারে মুনাফা অর্জন করবেন। আবার, আপনি যদি ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদী স্কিম চালু করেন, তাহলে ৭.০০% হারে মুনাফা অর্জন করবেন।
স্বাধীন সঞ্চয় স্কিম
স্বাধীন সঞ্চয় স্কিমের সঞ্চয়ী হিসাবে বিদ্যমান মুনাফা হারের অতিরিক্ত ৩% পর্যন্ত পাবেন। ১০০০টাকা দিয়ে এই স্বাধীন স্কিম চালু করতে হবে। এই স্কিমের মেয়াদ ৫ অথবা ১০ বছর।
সকল প্রকারের আমানত স্কিমের নাম, মুনাফার হার প্রভৃতি একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
ক্রমিক নং | আমানত স্কীমের নাম | মুনাফার হার | মেয়াদ |
---|---|---|---|
০১ | সোনালী সঞ্চয় স্কিম | ৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি) মাসিক কিস্তিঃ ৫০০ টাকা অথবা এর গুণিতক সর্বোচ্চ ১০,০০০/- টাকা। | ০৫ বছর |
০২ | শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম | ৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি ) মাসিক কিস্তিঃ ৫০০ টাকা অথবা এর গুণিতক সর্বোচ্চ ১০,০০০/- টাকা। | ১০ বছর |
০৩ | চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম | ৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি ) মাসিক কিস্তিঃ ৫০০ টাকা অথবা এর গুণিতক সর্বোচ্চ ১০,০০০/- টাকা। | ১০ বছর |
০৪ | পল্লী সঞ্চয় স্কিম | ৬.৫০% (সরল হার) মাসিক কিস্তিঃ ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা। | ০৭ বছর |
০৫ | বিবাহ সঞ্চয় স্কিম | ৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি) মাসিক কিস্তিঃ ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০, ২০০০, ৩০০০, ৪০০০,৫০০০,৬০০০,৭০০০, ৮০০০, ৯০০০ এবং ১০,০০০ টাকা। | ১০ বছর |
০৬ | অনিবাসী আমানত স্কিম | ৭.০০% (সরল হার) মাসিক কিস্তিঃ ৫০০০,৬০০০,৭০০০, ৮০০০, ৯০০০, ১০০০০, ১১০০০, ১২০০০, ১৩০০০, ১৪০০০, ১৫০০০ টাকা। | ০৫ বছর |
০৭ | সোনালী ব্যাংক অবসর সঞ্চয় স্কিম | ৮.০০% (সরল হার ০৩ থেকে ১৫ বছর মেয়াদী) | ০৩-১৫ বছর |
০৮ | সোনালী ব্যাংক মিলিওনিয়ার স্কিম | ৬.০০% (চক্রবৃদ্ধি ০৪ থেকে ০৮ বছর মেয়াদী)। ৬.৫০% (চক্রবৃদ্ধি ০৯ থেকে ১৪ বছর মেয়াদী)। ৭.০০% (চক্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদী)। | ০৩-২০ বছর |
০৯ | স্বাধীন সঞ্চয় স্কিম | সঞ্চয়ী হিসাবে বিদ্যমান মুনাফা হারের অতিরিক্ত ৩% প্রাথমিক জমাঃ ১০০০টাকা। | ৫ অথবা ১০ বছর |
সোনালী ব্যাংক লোন কীভাবে করবেন?
সোনালী ব্যাংক লোন কীভাবে করবেন একথার উত্তর দেওয়ার আগে জানা উচিত আপনি ব্যাংকে লোন করতে পারবেন কিনা। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সবাইকে লোন দেয় না।
সবাইকে লোন দেয়না কথাটির অর্থ, আপনি যদি সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তাহলে আপনাকে নিচের লিস্টের মধ্যে যেকোনো একজন হতে হবে। অন্যথায়, আপনি সোনালী ব্যাংকে লোন করতে পারবেন না।
- সরকারি, আধা-সরকারি ও সকল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
- ব্যাংক ও বীমা কোম্পানী, সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠিত ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে।
- গবেষনা প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠিত এনজিও, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
- বহুজাতিক কোম্পানীতে চাকুরীরত এ দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নিবাসী কর্মকর্তাগণ।
- বেসরকারী ব্যাংক বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারী গণ।
- এমপিওভূক্ত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী শিক্ষক/কর্মকর্তা/ কর্মচারী।
- ডিপোজিট স্কিম/স্থায়ী আমানত রশিদ ওয়েজ আর্নাস ডেভেলপমেন্ট বন্ড আইসিবি ইউনিট সার্টিফিকেটধারীগণ।
বিঃদ্রঃ বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে এমপিও ভুক্ত সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্থায়ী শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারী সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তিগত লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তে পার্সোনাল লোন সুবিধা পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। অন্যথায়, এমপিও ভুক্ত স্থায়ী শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারী সোনালী ব্যাংকে লোন তুলতে পারবেন না।
- কোনো স্থায়ী শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারীগন যদি সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তিগত লোন নেওয়ার জন্য আবেদন করেন, তাহলে আবেদনকারীকে যে এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্য একজন এ খণের জামিনদাতা হতে পারবেন। অন্যথায়, আপনি আবেদন করতে পারবেন না।
- কোনো স্থায়ী শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারীগন একাধিক খণের জামিনদাতা হতে পারবেন না। আপনি যদি একই সাথে একাধিক ঋণের জামিনদাতা হয়ে তাকে তাহলে সেটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো স্থায়ী শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারীর জামিনদাতা হবার সময় এটা অবশ্যই মনে রাখবেন আপনার ভবিষ্যত তহবিলের দায়হীন স্থিতি কমপক্ষে খণের সমপরিমাণ হতে হবে।
- অবসর ভাতা লিয়েন করে খণ প্রদান করলে সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের অনুকূলে তাঁদের অবসর ভাতা লিয়েনপূর্বক মাসিক ভাতার সর্বোচ্চ ৮০% দিতে হবে। এই ভাতা দেওয়া হবে মূলত উক্ত ভাতা গ্রহণকারী আখি হতে। বিভিন্ন পেক্ষাপট তথা কিস্তি বিবেচনায় খণসীমা নিয়ন্ত্রণ করে খণ বিতরন করা যাবে।
- এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসকল শিক্ষক/ কর্মকর্তা/কর্মচারী বেতন ভাতার ১০০% সোনালী ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত হয়, সে সকল শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারীদের হিসাবে জমা হয়। এ সকল শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারীদেরকেই কেবল বিনা জামিনদাতার ভবিষ্যৎ তহবিল না থাকলেও ২০লক্ষ টাকা পর্যন্ত পার্সোনাল খণ প্রদান করা যাবে।
- যদি কোনো এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারী ঋণ গ্রহণকালীন সময়ে খণ গ্রহীতার অনুরূপ জামিনদাতার চাকুরীর মেয়াদকাল কমপক্ষে এলপিআর সহ সর্বনিম্ন ৫ বছর থাকতে হবে।
- এমপিও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক / কর্মকর্তা / কর্মচারীগণ খণের মাসিক কিস্তি নির্ধারিত হবে খণ গ্রহীতার মাসিক নীট বেতনের দুই তৃতীয়াংশ এবং এটা অবশ্যই করতে হবে। এই ঋণ সেবা নিতে পারবেন বেসরকারী/স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সরকারী/বেসরকারী (এমপিওভুক্ত কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক/মাধ্যমিক বিদ্যালয়)-এর শিক্ষকবৃন্দ।
সোনালী ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি
সোনালী ব্যাংক কয়েকযুগ ধরে গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে আসছে। শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মধ্য এইচএসসি ও এসএসসি পাস হতে হবে। নিচে সোনালী ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য আপনি যোগ্য কি না তা যাচাই করতে পারবেন।
- আপনি যে সালে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে আবেদন করতে পারবেন। যে সকল শিক্ষার্থী এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ে অধ্যয়নরত রয়েছেন, তারা যদি সাধারণ গরীর মেধাবী শিক্ষার্থী / মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যা / তদীর পুত্র-কন্যাদের ক্ষেত্রে জিপিএ ৫.০০ পেতে হবে। অপরদিকে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যুনতম জিপিএ ৩.৫০ পেতে হবে।
- আপনি যে সালে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে স্নাতক বা সমমান পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত আবেদন করতে পারবেন। যে সকল শিক্ষার্থী স্নাতক/সমমান পর্যায়ে অধ্যয়নরত রয়েছেন, তারা যদি সাধারণ গরীর মেধাবী শিক্ষার্থী / মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যা/ তদীর পুত্র-কন্যাদের ক্ষেত্রে জিপিএ ৫.০০ পেতে হবে। অপরদিকে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যুনতম জিপিএ ৩.৫০ পেতে হবে।
বিঃদ্রঃ সোনালী ব্যাংক শুধুমাত্র দরিদ্র শিক্ষার্থী / প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী / অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যা / তদীর পুত্র-কন্যা আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু, যাদের পিতা/অভিভাবকের মাসিক আয় সর্বোচ্চ ১৫,০০০/= টাকার বেশী নয়। শুধু তারাই আবেদন করবেন।
সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম
- প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী ব্যাংকে সঞ্চয় করতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী একজন ব্যক্তি সব ধরণের সঞ্চয় মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
- সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই ৩ মাস অন্তর অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে স্কিমে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকার বেশি কিনতে পারবেন না।
- তাছাড়া, কোনো ব্যক্তি ৫ লক্ষ টাকার বেশি পরিমাণ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে বিগত বছরের আয়কর রিটার্ন পত্র জমা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে। তবে, ৫ লক্ষ টাকার কম সঞ্চয়পত্রে কোনো টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর রিটার্নের কোন কাগজপত্র দেখাতে হবে না।
সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার
- আপনি যদি ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার সর্বোচ্চ ১১.৫২% এবং সর্বনিম্ন ৯.৩৫% দিয়ে থাকেন। ১৫ লক্ষের নিচের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রের জন্য বিভিন্ন মুনাফার হার রয়েছে। আপনি যদি ৫ বছর মেয়াদী বিনিয়োগের কথা ভাবেন, তাহলে আপনি সর্বোচ্চ মুনাফা পাবেন কিন্তু ৫ বছরের কম মেয়াদে বিনিয়োগ করলে তুলনামূলক কম মুনাফা পাবেন।
- আপনার বিনিয়োগ ১৫ লক্ষের বেশি হলে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার হ্রাস পাবে।
- আপনি ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১ম বছরে ১০% এবং সর্বোচ্চ ৩ বছর মেয়াদে ১১.০৪% হারে মুনাফা পাবেন। তবে অবশ্যই আপনার মুনাফার উপর ৫-১০% হারে আয়কর কেটে নেওয়া হবে।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকে। এই সঞ্চয়পত্র সবাই করতে পারেন। সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank) এ ধরণের সঞ্চয়ের জন্য অনেক ভাল মুনাফা প্রদান করে থাকে। ৩ মাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার
মেয়াদ | ১৫ লক্ষ পর্যন্ত | ১৫০০০০১ টাকা-৩০ লক্ষ | ৩০০০০০১ লক্ষের বেশি |
---|---|---|---|
১ম বছর | ১০% | ৯.০৬% | ৮.১৫% |
২য় বছর | ১০.৫০% | ৯.৫১% | ৮.৫৬% |
৩য় বছর | ১১.০৪% | ১০% | ৯% |
সোনালী ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট রেট
সোনালী ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট রেট বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। গত বছর এফডিআর হার ছিলো ৩ বছর পর্যন্ত ৬.৫%। ৩ বছর মেয়াদী আমানতের উপর আপনি ৫.৬০% মুনাফা পাবেন। ৬মাস বা তদুর্ধ্ব অর্থাৎ এক বছর সময়ের জন্যও যদি আপনি টাকা জমা রাখেন তবুও ৫.৬০% মুনাফা পাওয়া যাবে।
শেষকথা
সারসংক্ষেপে এসে এটা বলতে পারি, সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ একটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকের সহায়তায় আপনি বিভিন্ন প্রকারের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এই অনুচ্ছেদটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি সোনালী ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।