আমাদের প্রতিদিনের চলার পথে ব্যাংক লোন শব্দটির সাথে সবাই কম-বেশি পরিচিত। নিজেদের প্রয়োজনে হোক বা অপরের প্রয়োজনে হোক বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সমস্যার কারণে লোন করার বিষয়টি মাথায় আসে অনেকের।
আমাদের সমাজের অনেক লোক আছেন, যারা টাকার প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক লোন নিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা ব্যাংক যে লোন দেয় সে বিষয়ে আমরা ভালো করে জানিনা।
আমাদের দেশে অনেক মানুষ রয়েছে যারা বিভিন্ন ব্যাংকে লোন নিয়ে অনেক ভালো কিছু করছেন কিন্তু আবার এমনও মানুষ খুঁজে পাবেন যারা লোনের চাপে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।তাই লোন নেওয়ার আগে কি বিষয় আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং ব্যাংক লোন কি এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের পোস্টে।
ব্যাংক লোন কি?
লোন শব্দটির অর্থ না বললেও আমরা কমবেশি সবাই জানি যে লোন কি। তবে শাব্দিক অর্থে লোন বলতে ধার, কর্য কিং ঋণ করাকে লোন বোঝায়।
ব্যাংক লোন হলো একটি আর্থিক চুক্তি যেখানে একটি ব্যাংক একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে এবং ঋণগ্রহীতা ঋণের মূল পরিমাণ এবং সুদ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ব্যবসা প্রসারণ, শিক্ষা, গৃহ নির্মাণ, চিকিৎসা বা অন্যান্য ব্যক্তিগত বা পেশাগত কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য ব্যাংক লোন গ্রহণ করা হয়।
প্রয়োজনে হোক অপ্রয়োজনে হোক আমরা প্রায়ই বন্ধু-বান্ধব, ফ্যামিলির অন্য কেউ বা প্রতিবেশীর কাছে আমরা বিভিন্ন মেয়াদে লোন নিয়ে থাকি। এই লোন নেওয়ার বিষয়টি কখনো বিনা সুদে হয়, আবার অনেক সময় সুদ দিতে হয়।
যদি প্রতিবেশী বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে সুদে লোন করি, তাহলে অনেক ভারী মাসুল দিতে হয়। এমন দেখেছি ঋণের জন্য অনেকে আবার নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
কিন্তু, এই লোন যদি আপনি কোনো ব্যাংকে গিয়ে করেন, তাহলে ব্যাংক আপনাকে নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ দিবে। ব্যাংক লোন হচ্ছে আপনি যখন কোনো ব্যাংকে গিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট শর্তাবলি মেনে, একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে সুদসহ সেই অর্থ পরিশোধ করার শর্ত সম্বলিত বিষয়টিকে ব্যাংক লোন বলে।
ব্যাংক লোন নেওয়ার সময় সবাই খুব গভীর আগ্রহ দেখায়। কিন্তু ব্যাংকে লোন নেওয়ার সময় কিছু বিষয় না জানলে তা হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আপনাকে লোনের প্রকারভেদ জানতে হবে। আসুন আমরা ব্যাংক লোন কত প্রকার ও কি কি সে বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই।
ব্যাংক লোন কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাদেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে আপনি লোন উত্তলন করতে পারবেন। কিন্তু, সকল ব্যাংক আপনাকে আপনার দরকারি লোন নাও দিতে পারে। কারণ, যখন কোনো ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়, ঐ ব্যাংক কেবল সেসকল জায়গায় লোন দিতে পারবে।
লোনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। মেয়াদের উপর ভিত্তি করে লোন মূলত ৩ প্রকার।
১। স্বল্প মেয়াদী লোনঃ
স্বল্প মেয়াদী লোন কথা আলোচনা করলে, এর নাম শুনেই বোঝা যায় যে এই লোনের মেয়াদ খুব কম। এই লোনের মেয়াদ মূলত ১ বছর বা তার নিচেও হতে পারে। এই মেয়াদে কেউ লোন গ্রহণ করলে, গ্রাহককে ১ বছরের মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া লোন বছরের মধ্যেই ফেরত দিতে হবে।
২। মধ্য মেয়াদী লোনঃ
মধ্যম মানের মেয়াদে যে লোন নেওয়া হয় সেই লোনকে মধ্যমেয়াদী লোন বলে। এই মেয়াদে লোনের মেয়াদকাল ১-৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। এই মেয়াদে ঋণ গ্রহণ করলে, ঋণ গ্রহীতাকে ১-৫ বছরের মধ্যে উক্ত অর্থ সুদসমেদ ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে।
৩। দীর্ঘমেয়াদী লোনঃ
দীর্ঘ মেয়াদী লোন বলতে দীর্ঘ কাল ধরে যে লোনের মেয়াদকাল থাকে, সেই লোনকে দীর্ঘমেয়াদী লোন বলে। এই লোনের মেয়াদকাল ৫ বছরের বেশি হয়। এই লোন গ্রহণ করলে গ্রাহককে ৫ বছরের বেশি সময় পায় ঋণ পরিশোধ করার জন্য।
উপরের ৩ প্রকারের লোন ছাড়াও ব্যাংক গুলো আরোও অনেক প্রকারের ব্যাংক লোন দিয়ে থাকেন। যেমনঃ
ক। অটো লোন বা কার লোন
ব্যাংক থেকে এই লোন গ্রহণ করলে ব্যাংক আপনাকে কার অথবা অটো নিতে সাহায্য করবে। এই লোন শুধু তাদের জন্য, যারা গাড়ি কেনার ইচ্ছে থাকলেও গাড়ি কিনতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে, এই লোনটি আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
গ। হোম লোন
এই লোনের দ্বারা গ্রাহক বাড়ি / সম্পত্তি / অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকার জন্য ব্যাংকে ব্যাংক লোন করতে পারবেন। অনেকেই হোম নিয়ে স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করছেন।
ঘ। ব্যক্তিগত লোন
এই লোনটি ব্যক্তিগত কোনো প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে গ্রহণ করতে পারবেন। এই লোন করলে আপনি যেকোনো প্রয়োজনে এই টাকা খরচ করতে পারবেন।
ঙ। বিজনেস লোন
ব্যবসা শুরু করার জন্য যদি আপনার অর্থের দরকার পড়ে, তাহলে এই লোনটি আপনার জন্যই প্রযোজ্য। ব্যাংক আপনাকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এই লোন প্রদান করে থাকেন।
চ। স্টুডেন্ট লোন
এই লোন গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী যারা অর্থের অভাবে পড়াশোনা চালাতে পারছেন না। তারাই কেবল এই লোন করে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবেন।
ছ। প্রবাসী লোন
আমাদের প্রবাসী ভাইদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রবাসী লোনের ব্যবস্থা করেছেন। আপনি যদি একজন প্রবাসী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি প্রবাসী লোন করতে পারেন।
জ। কৃষি লোন
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর একটি দেশ হওয়ায় কৃষকদের জন্য কৃষি লোনের ব্যবস্থা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।
ঝ। কুইক লোন
আপনার জরুরি প্রয়োজনে যে লোন নিতে পারবেন, সে লোনের নাম কুইক লোন। কিন্তু, এই লোন কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ / কেউ অসুস্থ হলে কিংবা বিয়ের জন্যই নিতে পারবেন।
আরোও অনেক প্রকারের লোন থাকতে পারে তবে আপনি যদি কোনো ব্যাংকে গিয়ে তাদের ঋণের প্রকার দেখতে চান, তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। কেননা, কোন সময় কোন লোন দেওয়া যাবে, আর কোন সময় কোন লোন দেওয়া যায়। সে বিষয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ সঞ্চয়পত্র কী? সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ও সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের যোগ্যতা জানুন
ব্যাংক লোন নেওয়ার পর কি কি কাজে লাগাবেন?
ব্যাংক লোন নেওয়ার পর কি কাজে লাগাবেন এটা হয়তো ব্যাংকের লোনের প্রকারভেদ থেকে জানতে পেরেছেন। আপনি যে কাজে ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন অবশ্যই সে কাজে লাগাবেন। কেননা, এতে করে ব্যাংক আপনাকে জরিমানা করতে পারে।
আপনি মূলত নিচের দেখানো লিস্ট অনুযায়ী আপনার দরকার অনুযায়ী ব্যাংক লোন খরচ বা বিনিয়োগ করতে পারেন।
- বাড়ি নির্মাণ করতে হোম লোন।
- গাড়ি কিনতে গাড়ি লোন
- ব্যক্তিগত দরকারে ব্যক্তিগত লোন
- চিকিৎসার জন্য জরুরি লোন
- পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট লোন
- ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য বিজনেস লোন
- কৃষিকাজের জন্য কৃষি লোন
- প্রবাসে যাওয়ার জন্য প্রবাসী লোন
এই কথা কখনোই ভুলবেন না, আপনি যে লোন নিয়েছেন অবশ্যই সেই উদ্দেশ্য টাকা গুলো ব্যয় করবেন।
সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
কথাটি শুনতে অনেক সোজা কিন্তু কাজটা এতোটা সহজ নয়। কিন্তু আপনি যদি ব্যাংক লোন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে লোন করতে যান, তাহলে অর্জিত জ্ঞান আপনাকে লোন নিতে সাহায্য করবে।
প্রথম ধাপঃ লোন ক্যাটাগরি সিলেকশন
ব্যাংকে লোন নেওয়ার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আপনি কেনো এবং কীসের জন্য ব্যাংকে লোন নিবেন। কেননা, আমরা পূর্বেই ব্যাংক লোন প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। ব্যাংকে লোন করার আগেই আপনাকে ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে নিতে হবে।
আপনি যদি গাড়ি লোন নিতে চান তাহলে ব্যাংকে অটো লোনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবার, আপনি যদি কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে চান, তাহলে আপনাকে কৃষি লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ অর্থ চাহিদা সিলেকশন
যখন আপনার লোন ক্যাটাগরি সিলেক্ট হয়ে যাবে, তখন আপনাকে আপনাকে আপনার অর্থ চাহিদা ঠিক করতে হবে। আপনার সব মিলিয়ে কত টাকা খরচ হবে। এবং কত টাকা ব্যাকআপ হিসেবে রাখবেন। সব মিলিয়ে একটা হিসেব করে রাখবেন।
আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, ঋণকৃত টাকা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করি তাহলে অপচয় হয়ে যাবে। যেহেতু এই টাকা গুলো ব্যাংক লোন নিচ্ছেন তাই ভেবে চিনতে খরচ করা উচিত।
তৃতীয় ধাপঃ প্রতিষ্ঠান সিলেকশন
ব্যাংক লোন এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ক্যাটাগরি সিলেকশন করে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লোনের জন্য আবেদন করা। কেননা, সব ব্যাংক সব ধরণের লোন দেয় না। আবার দিলেও সহজ শর্তে লোন দেয় না। সহজ শর্তে লোন দেওয়া কথাটি অর্থ হলো – সেখানে হয়তো সুদের পরিমাণ বেশি বা অন্যান্য সুবিধা কম।
তাই সহজ শর্তে লোন পাওয়ার জন্য আপনাকে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানে যাওয়াটা জরুরি। যেমনঃ কৃষি লোনের জন্য আপনাকে বাংলাদেশে দুইটি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে। সেখানে আপনি সহজ শর্তে কৃষি লোন পাবেন।
তাই এটা বলাই যেতে পারে যে, আপনাকে অবশ্যই আপনার ক্যাটাগরি অনুসারে আপনার প্রতিষ্ঠান সিলেকশন করে নিয়ে ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রতিষ্ঠান সিলেকশন করার সময় এটা মনে রাখবেন, যেসব ব্যাংক উচ্চ সুদের হারে ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে এমন ব্যাংক নির্বাচন থেকে দূরে থাকুন। তবে, বাংলাদেশের সকল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর রেগুলেশন্স ও গাইডলাইন্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
চতুর্থ ধাপঃ লোন পাওয়ার শর্ত পড়ে নিন
আপনার পছন্দের ব্যাংক সিলেকশন করার পর যখন আপনি ব্যাংকে যাবেন ব্যাংক লোন আবেদন করতে। তখন অবশ্যই লোনের সকল শর্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন। যদি সেই শর্ত পূরণ করার সামর্থ্য থাকে তবেই ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করবেন। অন্যথায় করবেন না।
পঞ্চম ধাপঃ ইনস্টলমেন্টের আকার
প্রতি মাসে কতো টাকা প্রদান করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। কেননা, সর্বোপরি এই টাকাটা প্রতিমাসে আপনাকেই দিতে হবে। প্রতিমাসে কত টাকা ফেরত দিতে হবে তা ইএমআই এর নির্ভর করে লোন পরিমাণ ও সুদের হারের কত হবে।
আপনি প্রতিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। লোনের পরিমাণ এবং সুদের হার জেনে নিয়ে আপনি অনলাইনের মাধ্যমেই ইএমআই বের করে নিতে পারবেন।
বিঃদ্রঃ একটা কথা মনে রাখবেন আপনার ইনকামের চেয়ে ইএমআই কোনোভাবেই যেনো বেশি না হয়। যদি কোনো কারণে আপনার ইনকামের থেকে ইএমআই বেশি হয় তাহলে আপনার জীবনে বিরূপ প্রভাবে ফেলবে। তখন এই লোন আপনার জীবনে বড় কাল হয়ে যাবে। অন্যদিকে, ইওএমআই এর পরিমাণ কম হলে আপনাকে এই ঋণের বোঝা অনেক দিন টানতে হবে।
ব্যাংক লোন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যাংকে লোন নেওয়ার আপনার যেসকল কাগজপত্র লাগবে তা আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখবেন। লোনের জন্য আবেদন করার সময় এই সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- সঠিকভাবে পূরণকৃত ব্যাংক লোনের আবেদনপত্র।
- নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি।
- যদি ব্যবসায়ের জন্য লোন করে থাকেন তাহলে প্রতিষ্ঠানে নামে ব্যাংকে চলতি হিসাব।
- লোন গ্রহীতা ও নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ঔষধ ব্যবসার ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্স।
- খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ক্ষেত্রে বিএসটিআই সার্টিফিকেট।
- ডিজেল ও এসিড ব্যবসার ক্ষেত্রে ডিসির অনুমোদনপত্র।
- বিগত ১ থেকে ৩ বৎসরের ব্যাংক প্রতিবেদন। যদি দোকান / ঘর চুক্তি থাকে তবে চুক্তিনামা।
- পজিশনের কাগজপত্র।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাট সার্টিফিকেট।
- বিদ্যুৎ বিল / টেলিফোন বিল / গ্যাস বিল ইত্যাদি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র।
- কর্মচারীদের নাম, পদবী এবং মাসিক বেতনের তালিকা ।
- আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
- দোকান থাকলে মজুদ মাল ও তার বর্তমান মূল্যের তালিকা।
- বর্তমানে অন্য কোথাও ঋণ থাকলে তার বিবরণী ।
- ব্যবসার বিগত ১ বৎসরের বিক্রয় ও আর্থিক বিবরণী।
উপরের কাগজপত্র গুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যার ঔষধ ব্যবসা রয়েছে, সে যদি ব্যাংক লোন করতে চায়, তাহলে তার ড্রাগ লাইসেন্স লাগবেই। অপরদিকে, যারা খাদ্য প্রস্তত, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত তাদেরকে বিএসটিআই সার্টিফিকেট লাগবে।
তাই উপরের দেওয়া কাগজপত্রের মধ্যে যেটা আপনার জন্য তা নিশ্চিত করে সংগ্রহ করে রাখুন। যা লোনের আবেদন করার সময় এসব কাগজপত্র সাবমিট করতে পারেন।
ব্যাংক হার কি?
ব্যাংক হার যার অন্যনাম ডিসকাউন্ট হার। ব্যাংক হার বলতে সেই সুদ হারকে বোঝায় যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ঋণ দিয়ে থাকে।
ব্যাংক রেট / রেট বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই রেট বা হারের নামের সাথে সাথে কৌশলগত ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
সুদের হার কত?
বাংলাদেশের কোম্পালি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী সব ধরনের বিনিয়োগ ও ঋণে সুদের হার করা হয় সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ক্রেডিট কার্ড এর আওতাভুক্ত নয়। সকল ডিজিটাল কার্ডের ক্ষেত্রে আলাদা সুদের হার প্রযোজ্য হতে পারে।
কোনো ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কোম্পানি আইনকে লঙ্ঘন করতে পারবেনা। প্রতিটি ব্যাংক যেকোন প্রতিযোগিতায় কোনোভাবেই সুদের পরিমাণ ৯% এর বেশি করতে পারবেন না। কিন্তু এটা নির্ভর করবে ব্যক্তির উপর।
তবে, যদি কোনো গ্রাহক ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে সেই ঋণকে খেলাপি ঋণ বলে। খেলাপি ঋণের জন্য সুদের হার অতিরিক্ত ২% বাড়িয়ে ১১% করতে পারবেন।
সুদের হার বাংলাদেশ বাংলা তথা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। কোনো কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যাংক রেটের থেকে বেশি রেট নিতে পারবেন না। তাই ব্যাংক লোন নেবার আগে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে দেখে চেক করে নিবেন।
জামানত হিসেবে কী রাখা হয়?
কোনো বাণিজ্যিক আপনাকে জামানত ছাড়া লোন প্রদান করবে না। কেননা, ঋণের টাকা উঠানো অনেক ঝামেলা। তাই ব্যাংক তাদের গ্রাহকদেরকে ঋণ দেওয়ার বিপরীতে ঋণগ্রহীতাদের কাছে থেকে বিক্রয়যোগ্য, নগদায়নযোগ্য অথবা বৈধ জামানত গ্রহণ করে থাকে।
মূলত জামানত নিয়ে থাকে নিজের টাকার সিকিউরিটির জন্য। ধার দেওয়া টাকা উঠাতে আমাদের যেমন কষ্ট হয় ঠিক ব্যাংকেও হয়।
যদি কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে উক্ত জামানত নিলামে তুলে ব্যাংক তার চাহিদা পূরণ করে থাকে।
ব্যাংক লোনের বিপরীতে ব্যাংক জামানত হিসেবে ব্যাংকে জমা হিসেবে রক্ষিত অর্থ , সহজে রূপান্তরযোগ্য এমন আর্থিক সম্পদ, সম্পত্তি ( যেমন; জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দালানকোঠা ইত্যাদি) গ্রহণ করে থাকে।
ঋণ খেলাপির কারণে অনেক মানুষ সবকিছু হারিয়েছে। তবে বর্তমানে ব্যাংক গুলো সহজ শর্তে লোন দিয়ে থাকেন। সহজ শর্তে ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য কোনো জামানতের প্রয়োজন পরে না। অনেক সময় জামানত হিসেবে ফিক্সড ডিপোজিটের ডকুমেন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকে লোন আবেদন করার সময় নিয়ে থাকে।
ব্যাংক লোনের সুবিধা
ব্যাংক লোনের অনেক সুবিধা রয়েছে। যারা পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তা হতে পারছেন না, তাদেরকে ব্যাংক লোন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় পুঁজি দিয়ে থাকে।
মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তৈরি করা হয়েছে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পেছনে কাজ করার উদ্দেশ্য। তাই এই ব্যাংক গুলো বিভিন্ন সেবা মূলক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে।
ব্যাংকে অনেক সেবামূলক কাজের মধ্যে উদ্যোক্তাদেরকে পুঁজি তৈরিতে সাহায্য করা।
তাই আমরা বলতে পারি, এই ব্যাংক লোন বেকারদের সুযোগ দিচ্ছে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার। ফলে দেশের বেকারত্ব দূর হবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংগঠিত হচ্ছে।
ব্যাংক লোনের অসুবিধা
প্রতিটি কাজ / জিনিসের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে। তেমনি বাংলাদেশের ব্যাংক লোনেরও কিছু অসুবিধা থাকাটা স্বাভাবিক।
ব্যাংক তার ঋণ পরিশোধের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেন। যার ফলে কোনো ঋণ গ্রহীতা যদি ওই সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বিরূপ ঘটনা ঘটতে পারে।
কখনো কখনো সুদের বোঝা অনেক ভারী মনে হয়। কেননা, আপনি যেমনটা মনে করেছিলেন যদি সেরূপ না হয় তাহলে আপনার সম্মতিতে নেওয়া সুদের হার বিষ মনে হবে।
যেকোন ব্যাংক দ্বারা প্রতারিত হলে কি করবেন?
কোনো ব্যাংক দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন মনে হয় তাহলে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে আপনার অভিযোগ জমা দিতে পারবেন।
যেহেতু বাংলাদেশে চালুকৃত সকল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত তাই আপনার সাথে প্রতারিত হলে আপনি প্রথমে আপনার ব্যাংকে অভিযোগ করুন। যদি আপনার ব্যাংক আপনার অভিযোগের পরেও কোনো সমাধান না দেয়, তাহলে ১৬২৩৬ নাম্বারে কল দিতে পারবেন এবং আপনার অভিযোগটি করতে পারবেন।
মোবাইলে কল দেওয়ার সুযোগ না থাকলে আপনি অনলাইনে মাধ্যমেই আপনার অভিযোগপত্র জমা করতে পারবেন।
উপরিউক্ত লিংকে গিয়ে আপনি যেকোন ব্যাংকের নামে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ করার পর অবশ্যই আপনার অভিযোগের সুবিচার পাবেন।
এই কাজটি আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাপ দিয়েও করতে পারবেন। সেই জন্য আপনাকে গুগল প্লে স্টোর থেকে CIPC- Customers Interest Protection Centre অ্যাপটি ডাউনলোড করে সেখানে অভিযোগপত্র জমা দিতে হবে।
শেষকথা
বর্তমান সময়ের মানুষ নিজেদের জন্য হোক বা অপরের প্রয়োজনের জন্য হোক, যেকোনো সমস্যায় কিংবা যেকোনো কাজ শুরু করার জন্য পুঁজি না থাকলে লোনের জন্য মানুষের শরণাপন্ন হয়ে থাকে।
এই লোনটি কোনো ব্যক্তির কাছে না নিয়ে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে নিলে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সহজ শর্তে ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকেন।
ব্যাংক লোন গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনি কীসের জন্য লোন করছেন সেদিকে অর্থ গুলো ব্যবহার করবেন। অন্যথায়, সে অর্থ আপনার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে, আপনার অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
পরিশেষে একটা কথা বলবো, আমরা যদি ব্যাংকে লোন নিয়ে লোনের টাকা সঠিক কাজে ব্যবহার করি তাহলে সেই ব্যাংক লোন আপনাকে মুনাফা দিবে।