প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন (Probashi Kallyan Bank Loan) থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম কি, সুদের হার কত, সুবিধা কি ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য আমাদের ব্লগে এসেছেন? যদি আপনি এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের গেট ব্যাংক ইনফো‘তে এসে থাকেন, তাহলে আপনি ঠিক যায়গায় এসেছেন।
এই লেখাটি আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সম্পর্কে একজন গ্রাহক হিসেবে যা জানা দরকার, সেই সকল বিষয় আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বর্ণনা করবো। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাংলাদেশের সরকারের একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক। এই ব্যাংক মূলত বাংলাদেশের বিদেশে অবস্থিত প্রবাসীদের জন্য তৈরি একটি বিশেষায়িত আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হল বাংলাদেশে এর একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক। যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় কলম্বো প্রসেস এর ৪র্থ সম্মেলন চলাকালীন সময় ২০১১ সালের ২০ শে এপ্রিল এই ব্যাংকের শুভ উদ্বোধন করেন।
তারপর ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে দেশের ৫৮ তম ব্যাংক হিসেবে তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংকরূপে তালিকাভূক্ত করে নেয়। এটি মহান জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ৫৫নং আইন (প্রবাসী কল্যান ব্যাংক আইন-২০১০) এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গমনেচ্ছুক বাংলাদেশী বেকার যুবকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে প্রত্যাগমনের পর কর্মসংস্থানের সহায়তা প্রদান, প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণ এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও ব্যয়-সাশ্রয়ী পন্থায় সহজে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তা প্রদান করা এই ব্যাংক এর মুল লক্ষ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম, সুদের হার
বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিভিন্নভাবে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য ২০১০ সালে এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করে। এই ব্যাংক বাংলাদেশের বিদেশী প্রবাসীদের জন্য একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে বিভিন্ন রকমের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ জীবিকার উদ্দেশ্যে বিদেশে ভ্রমণ করে থাকেন। কিন্তু কোনো কারণে যদি অর্থ বহন করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন। তাই এই আর্টিকেলে আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে কীভাবে লোন নিতে পারবেন, সেই লোনের সুদের হার কত এবং লোন নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকার কি কি?
অভিবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ সেবা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যাংকে যে লোন বা ঋণ প্রদান করে থাকে সেই ব্যাংক হচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক Probashi Kallyan Bank। এই ব্যাংক সর্বমোট ৪টি ঋণ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নে প্রবাসী কল্যান ব্যাংক এর বিভিন্ন ধরণের ঋণ সেবা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
১. অভিবাসন ঋণ
বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিদেশে জীবিকা নির্বাহের জন্য যেতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদেকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য অভিবাসন ঋণ চালু করেছেন। এই লোন/ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী নাগরিককে প্রবাসে অবস্থান করে কোন চাকরি বা কাজ করতে হবে অন্যথায় এই ঋণ দেওয়া হয়না।
এই অভিবাসন ঋণ মূলত নতুন ভিসা, বিদেশে যাওয়ার খরচ হিসেবে আপনি ব্যয় করতে পারবেন। কিন্তু Probashi Kallyan Bank loan এর টাকা আপনি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না।
ঋণ সীমা ও মেয়াদকাল | Loan Limit & Date
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন Probashi Kallyan Bank ঋণের আওতায় কোনো ব্যক্তি ঋণ নিতে চাইলে, সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন হিসেবে গ্রহন করতে পারবেন এবং রি-এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রেও ৩ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে গ্রহন করতে পারবেন।
আপনি নতুন ভিসার জন্য যে ঋণ পাবেন, তার মেয়াদ সর্বোচ্চ ২ বছর। আপনাকে সর্বচ্ছ ২ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আবার আপনি যদি রি-এন্ট্রি ভিসার জন্য ঋণ / লোন করে থাকেন, তাহলে আপনাকে ২ বছরের মধ্যেই সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
আপনি ঋণ নেওয়ার পর পরিশোধ তথা কিস্তি দেওয়া শুরু করতে হবে ২ মাস পর থেকে। আপনার ঋণ গ্রহণের ২ মাস পর থেকে আপনাকে মাসিক কিস্তি আকারে টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন Probashi Kallyan Bank Loan এর অভিভাসন ঋণের ক্ষেত্রে আপনি যখন ঋণ গ্রহন করবেন,তখন সেই ঋণের সুদের হার থাকবে ৯% সরলসুদে।
অভিবাসন ঋণ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন এর অভিবাসন ঋণ গ্রহন করতে হলে আপনাকে মানে ঋণ আবেদনকারীর ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছবি, ভোটার আইডি কার্ড / জাতীয় পরিচয়পত্র, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানাসহ পৌরসভা / ইউনিয়ন পরিষদের সার্টিফিকেটের ফটোকপি ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
অভিবাসন ঋণ গ্রহন করার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ২ জন নমিনির ১ কপি করে সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ, ভোটার আইডি কার্ড / জাতীয় পরিচয়পত্র বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানাসহ পৌরসভা / ইউনিয়ন পরিষদের সার্টিফিকেটের ফটোকপি জমা দিতে হতে পারে।
আবেদনকারীর পাসপোর্ট ও ভিসার কপি ও ম্যানপাওয়ার স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি এবং লেবার কন্ট্রাক্ট পেপার থাকলে লোন পেতে অনেক সুবিধা হয়। তবে এটা বাধ্যতামূলক না। তাছাড়া ২জন নমিনির ১ জনের স্বাক্ষরকৃত ৩টি ব্যাংকের ব্ল্যাংক চেকের পাতা জমা দিতে হবে। এটা বলে রাখা ভালো যে নমিনিকে অবশ্যই আপনার অবর্তমানে টাকা দেওয়া ক্ষমতা থাকতে হবে।
২. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক পূনর্বাসন ঋণ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন (Probashi Kallyan Bank Loan) এর পূনর্বাসন ঋণ হচ্ছে বাংলাদেশী কোন নাগরিক চাকরীর উদ্দেশ্যে কোন দেশে যাওয়ার পর কোন কারণে স্বদেশে ফিরে এসে স্বাবলম্বি হওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন এর আবেদন করে থাকে তাহলে সেই ঋণকে পূনর্বাসন ঋণ বলা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঐ ব্যক্তিকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য সহজ শর্তে বীণাজামানতে পূনর্বাসন ঋণ প্রদান করে থাকে।
বৈধ প্রবাসী কর্মীরা যদি বিদেশ হতে একেবারে চলে আসেন এবং দেশে কোন বৈধ প্রকল্প বা ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর পুনর্বাসন ঋণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্যে প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পুনর্বাসন ঋণ নিতে পারবেন।
পূনর্বাসন ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
পূনর্বাসন ঋণ নেওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র/ডকুমেন্টস লাগে সেটা হয়তো অনেকেই জানেনা। এই ঋণ নেওয়ার জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
ঋণের আবেদনের জন্য সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ৩কপি রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে। আপনার পাশাপাশি যে আপনার এই ঋণের নমিনি তারও সদ্য তোলা ২ কপি ছবি দিতে হবে। পূনর্বাসন ঋণ নেওয়ার জন্য আপনাকে এবং আপনার নমিনির পাসপোর্ট / জাতীয় পরিচয়পত্র / ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদির ফটোকপি লাগবে।
ঋণগ্রহীতা ও ঋণগ্রহীতার জামিনদারের ঠিকানা ভেরিফিকেশনের জন্য বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য আপনার এলাকা / পৌরসভা / ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র লাগবে।
যদি কেউ ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হতে চান, সেক্ষেত্রে কি প্রকল্প করতে চান সেই বিষয়ে ট্রেড লাইসেন্স করলে তার কপি জমা দিতে হতে পারে। এছাড়া প্রকল্পের বিবরণী তথা সর্বনিম্ন ২ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসার সংক্রান্ত বিবরণী জমা দিতে হতে পারে।
আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য কোন সংস্থার কাছে ঋণ গ্রহন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার ক্লিয়ারেন্স ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে। এগুলো দেওয়ার পাশাপাশি একজন ঋণ গ্রহীতা কি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সে বিষয়ে অবশ্যই অবগত করতে হবে। তাছাড়া আপনি বিদেশ থেকে কেনো এবং কি কারণে দেশে প্রত্যাগমন করছেন সে বিষয়ে যাবতীয় কাগজের ফটোকপি প্রবাসি কল্যান ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
লোন সীমা ও মেয়াদ
পূনর্বাসন ঋণের সীমা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা। কোনো নাগরিক এই টাকার বাইরে লোন গ্রহন করতে পারবেন না। ৫০ লক্ষ টাকা লোনের জন্য উক্ত গ্রাহককে কনকিছু জামানত হিসাবে রাখতে হবে। তবে জামানতবিহীন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৩ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশের যেকোন প্রবাসী পূনর্বাসন ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা বিনা জামানতে খুব সহজেই গ্রহন করতে পারবেন।
যদি কোনো গ্রাহক ৩ লক্ষ টাকার উপরে যেমন- ৩ লক্ষের উপরে কিন্তু ৫ লক্ষ টাকার নিচে ঋণ গ্রহন করতে চান, সেক্ষেত্রে তাকে সেই লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জামানত রাখতে হবে।
পূনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে যদি কোন গ্রাহক ৫ লক্ষ টাকার উপরে ঋণ গ্রহন করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে উক্ত ঋণের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতার স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্র মর্টগেজমূলে ব্যাংকের নিকট জমা রাখতে হবে।
পূনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে আপনি কিভাবে এই ঋণ পরিশোধ করা শুরু করবেন, সেটা নির্ভর করবে ঋণের ধরণের উপর। কিন্তু এই ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদকাল ১০ বছর। যদি কোন ব্যক্তি এই ১০ বছরের মধ্যে অর্থ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জমাকৃত সম্পত্তি ব্যাংক নিলামে তুলে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।
এই ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহক সরলসুদে ৯% হারে ব্যাংককে মুনাফা প্রদান করে থাকে।
৩. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
Probashi Kallyan Bank Loan এর বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ হচ্ছে প্রবাসে অবস্থিত কোন প্রবাসীর উপর নির্ভরশীল থাকা যেকোন ব্যক্তি যেমন তার বাবা, মা, স্বামী স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোন ইত্যাদি যেকোন কেউ বিদেশ থেকে প্রত্যাগমন করলে উক্ত পরিবারের সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ নামক ঋণের যোগ্য বিবেচিত হয়ে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই ধরণের ঋণ ব্যবস্থাপনায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বীণা জামানতে বা জামানত নিয়ে ঋণ প্রদান করে থাকে। যদি ঋণের পরিমাণ খুব বেশি হয় বা ৩ লক্ষ টাকার উপরে হয়, সেক্ষেত্রে জামানত লাগবে কিন্তু ঋণের পরিমাণ কম হলে সেক্ষেত্রে জামানত না লাগতে পারে।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
যেকোন ব্যাংকের লোন গ্রহন করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট/কাগজপত্র এবং কিছু যোগ্যতা লাগে।অন্যান্য সব ব্যাংকের মতই বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ গ্রহন করতে চাইলে আপনাকে নিচের কাগজপত্র অবশ্যই ব্যাংলে জমা দিয়ে লোন আবেদন করতে হবে।
প্রতিটি ঋণ গ্রহনের ক্ষেত্রে যে কাগজপত্র লাগবেই সেটা হচ্ছে, আপনি যে বাংলাদেশের নাগরিক সেই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র / ভোটার আইডি কার্ড / পাসপোর্টের ফটোকপি ইত্যাদি। তবে এই সকল কাগজপত্র মূলত গ্রাহক এবং নমিনি ২জনেরই লাগতে পারে।
আপনার বাংলাদেশের বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন কার্ড / জাতীয় পরিচয়পত্র / ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবেই।
গ্রাহক ও নমিনিকে চেনার জন্য তার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি লাগবে। তবে গ্রাহকের লাগবে তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং নমিনির ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি লাগবে।
আপনি যে প্রকল্প বা ব্যবসা শুরু করতে চান, সে প্রকল্পের সকল বিবরণী যেমন প্রকল্প কোথায় অবস্থিত, নিজের জমিতে তৈরি করা নাকি অন্যের জমিতে করা এই বিষয়ে অবশ্যই প্রবাসি কল্যান ব্যাংককে জানাতে হবে। প্রকল্পটির স্থান ভাড়া করে থাকলে, সে বিষয়ে একটি Letter of Disclaimer বা ভাড়ার চুক্তিপত্র নিতে হবে।
প্রকল্পটির জন্য অন্য কোন ব্যাংক / এনজিও / সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে সেই লোনের বিষয়ে বিবরণী প্রদান করতে হতে পারে। ঋণ গ্রহীতাকে অবশ্যই নিজ নামের ৩ কপি নিজস্ব স্বাক্ষরিত ব্যাংক চেকের হিসার বিবরণী প্রদান করতে হবে।
সর্বচ্চ লোন কত টাকা নিতে পারবেন?
আপনি যদি বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ সম্পর্কে জানতে হলে সবার আগে জানা উচিত কত বছরের মধ্যে সেই লোন পরিশোধ করতে হবে।
আপনি বিনাজামানত সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। আপনি যদি ৩ লক্ষ টাকার উপরে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ নিতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে জামানত হিসেবে ব্যাংকের কাছে বিক্রয়যোগ্য কোনকিছু জমা রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
অতএব, আপনি যদি ৩ লক্ষের উপরে ৫ লক্ষের ঋণ গ্রহন করতে চান তাহলে আপনাকে জামানত দিয়ে লোন গ্রহন করতে হবে। ঋণের পরিমাণ যদি ৫ লক্ষ টাকার বেশি এবং ৫০ লক্ষ টাকার নিচে ঋণ নিতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে জামানত হিসেবে ঋণের বিপরীতে আপনার মালিকানাধীন স্থাবর সম্পত্তি রেজিস্ট্রি দলিলাদি জমা রাখতে হবে।
৪. কোভিড-১৯ বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী প্রবাসি কর্মীকে পুনর্বাসনের জন্যে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ দিয়েছিলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। প্রবাসী কর্মীরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কিংবা কাজ হারিয়ে ১ জানুয়ারী ২০২০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে ফিরে এসেছেন তারা দেশে যেকোন বৈধ প্রকল্প/ব্যবসা করার জন্যে এই ঋণের নেওয়ার জন্যে আবেদন করতে পারবেন।
বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ চালু করা হয়েছিলো মূলত করোনা ভাইরাসের সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়া প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে। যেহেতু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নেই বললেই চলে তাই এই ভাইরাসের কারণে যারা বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ গ্রহন করেছেন, তাদের লোনের সুদের হার ৪% মেয়াদ চলবে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত। এবং
Probashi Kallyan Bank Loan, লোনের সীমা, মেয়াদ ও সুদের হার
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে থেকে ঋণ বা লোন নেওয়ার আগে আমাদের জেনে নেওয়া উচিত এই ব্যাংক লোনের বিপরীতে কত শতাংশ সুদ নিয়ে থাকে। উপরের আলোচনায় আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত প্রকারের লোন প্রদান করে থাকে, সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি।
নিচে আমরা লোণের নাম, মেয়াদ, সুদের হার কত, লোনের সিমা কত ইত্যাদি বিষয়ে টেবিল বানিয়ে দিলাম-
লোনের নাম | লোনের মেয়াদ | সুদের হার | লোনের সীমা |
---|---|---|---|
অভিবাসন ঋণ | নতুন ভিসা করার ক্ষেত্রে ৩ বছর | ৯% সরলসুদ | ৩ লক্ষ টাকা |
রি-এন্ট্রি ভিসা করার ক্ষেত্রে ২ বছর | ৯% সরলসুদ | ৩ লক্ষ টাকা | |
পূনর্বাসন ঋণ | সর্বোচ্চ ১০ বছর | ৯% সরলসুদ | ৩ লক্ষ টাকা জামানত বিহীন |
৩-৫ লক্ষ টাকা জামানত লাগবে | |||
৫-৫০ লক্ষ টাকা জামানত হিসেবে সম্পত্তির কাগজপত্র | |||
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ | সর্বোচ্চ ১০ বছর | ৯% সরলসুদ | ৩ লক্ষ টাকা জামানত বিহীন |
৩-৫ লক্ষ টাকা জামানত লাগবে | |||
৫-৫০ লক্ষ টাকা জামানত হিসেবে সম্পত্তির কাগজপত্র |
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন কিভাবে করবেন?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রতিটি লোনের স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনি যদি প্রতিটি লোনের স্কিম সম্পর্কে ধারণা না রাখেন, তাহলে তিনি বিভিন্ন সমস্যা পরতে পারেন। তাই লোনের আবেদনের ক্ষেত্রে পূর্বে আলোচিত সকল লোন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাল করে জেনে নিবেন।
Probashi Kallyan Bank Loan নেওয়ার জন্য আপনাকে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যেকোন শাখায় গিয়ে লোন নেওয়ার জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করবেন।
তারপর আপনার সকল তথ্য ভালো করে পূরণ করে উক্ত ফরমটি ব্যাংকে কার্যরত কর্মকর্তাকে দিলে তারা আপনার আবেদনটি দেখে আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য হলে খুব সহজেই আপনার লোন আবেদনের ফরমটি এপ্রোভ করে আপনাকে লোন প্রদান করবে।
বাংলাদেশের সকল উপজেলায় ও জেলায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা নেই। তবে দেশের বেসিরভাগ জেলায় প্রবসি কল্যান ব্যাংকের শাখা আছে। বাংলাদেশের কোন কোন স্থানে ব্যাংকের শাখা রয়েছে, সে সম্পর্কে নিচের লিংকে প্রবেশ জানতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা কি কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বর্তমানে টাকার অভাবে বিদেশে যেতে পারছেন না এমন ব্যক্তিদেরকে সরলসুদে লোন প্রদান করে থাকে। ফলে তারা অনেক উপকৃত হয়। একটা সময় ছিলো যখন প্রবাসী ব্যক্তিদের প্রবাসে থাকার কারণে বাংলাদেশের কোন প্রকারের সুযোগ সুবিধা পান না। কিন্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন দেওয়ার কারণে অনেকে লোন নিয়ে কাজের জন্য প্রবাস গমন করে উপকৃত হচ্ছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিদেশে গমন করার জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা লোন প্রদান করে থাকে। ফলে প্রবাসে যাওয়ার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবাসিরা সাহায্য পেয়ে থাকে।
যদি কোনো কারণে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে যদি কোনো প্রকল্প বা উদ্যোক্তা হতে চান সেক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আর্থিক সাহায্য করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ সোনালী ব্যাংক লোন কীভাবে নিবেন? লোন পাওয়ার উপায় কি?
শেষকথা
সবশেষে একথা বলা যেতে পারে যে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে প্রবাসীরা লোন নেওয়ার জন্য যা কিছু জানার দরকার এবং প্রবাসি কল্যান ব্যাংক কি? কিভাবে লোন নিবেন সেই বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। যদি কোনকিছু জানার থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
আশাকরি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি প্রবাসি কল্যান ব্যাংক কি? কিভাবে কাজ করে আপনি কিভাবে লোন পাবেন।