ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) বলতে এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে বোঝায় যেখানে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় ইসলামিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করাই এই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার প্রধান উদ্দেশ্য। এই ব্যাংকগুলোতে কোন প্রকারের লাভ ও লোকসানের ভাগ নেওয়া এবং সুদ লেনদেন পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
অর্থাৎ, বিনা সুদে লাভ লোকসানে ভাগীদার হওয়া নিষিদ্ধ এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে ইসলামের অর্থনৈতিক নীতিমালা ও আর্থিক শর্তাবলি মেনে চলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয় এরকম ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাকে ইসলামী ব্যাংকিং বলে।
ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) কী?
ইসলামে সুদ খাওয়া এবং কোনো প্রকারের লাভ-লোকসান ইত্যাদি হারাম। কিন্তু, ব্যাংকিং সেক্টরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সাধারণ জনগণের আমানত গ্রহণ করে, সেই অর্থ বড় বড় শিল্পপতিদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে ব্যবসা করা।
কিন্তু ইসলামে সুদ খাওয়া হারাম হওয়ার জন্য সাধারণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বাইরে এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যে সকল ব্যাংক বিনা সুদে পরিচালিত হবে। যার ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে ইসলামী শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হবে।
মালয়েশিয়ার ‘ইসলামিক ব্যাংকিং (Islamic Banking) অ্যাক্ট-১৯৮৩ অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা প্রদান করেছে। এই আইন অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা বলতে-
“ইসলামী ব্যাংক এমন একটি কোম্পানি, যা ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) ব্যবসায় নিয়োজিত– ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবসা হচ্ছে এমন এক ধরনের ব্যবসা যার লক্ষ্য এবং কার্যক্রমের কোথাও এমন কোন উপাদান নেই যা ইসলাম অনুমোদন করেনি।“
ইসলামী সন্মেলন সংস্থা (ওআইসি) মতে, “ইসলামী ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা তার মৌলিক বিধান ও কর্মপদ্ধতির সকল স্তরে ইসলামী শরীয়াতের নীতিমালা মেনে চলতে বদ্ধপরিকর এবং তার কর্মকাণ্ডের সকল পর্যায়ে সুদ বর্জন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।“
একটি ইসলামী ব্যাংকের উদ্দেশ্য-
- ব্যক্তিগত স্বার্থ নয় সমাজের স্বার্থ সবার উপরে।
- সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমন্বয় সাধন করা।
- ব্যাংকের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিনা সুদে।
- কোনো প্রকারের লাভ লোকসানের সাথে জড়িত না থাকা।
- নৈতিক শৃঙ্খলার বিধান অনুসরণ করা।
- বিনিয়োগে অংশীদার নীতি অনুসরণ করে।
- টাকার কারবার না করে পণ্যের ব্যবসার করা।
- মুদ্রাস্ফীতির কারণ দূর করা।
- বেকারত্ব দূর করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
- দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক নয় ইসলামী ব্যাংক অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী।
- ইসলামী শরিয়াহ অনুসরণ করা।
- বঞ্চিত ও অভাবী মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন।
- লোভ নয়, প্রয়োজন পূরণ করে থাকে ইসলামী ব্যাংক।
উপরের লেখায় আমরা ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। নিচে আমরা ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ইসলামী ব্যাংক কত প্রকার ও কি কি?
বাংলাদেশে পরিচালিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১০ টি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) কার্যক্রম করে। ইসলামিক শরীয়াহ ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের লিস্ট নিচে ছক আকারে প্রদান করা হলো।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড | ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড |
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড | স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড |
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড | শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড |
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে | ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড |
এক্সিম ব্যাংক (বাংলাদেশ) | গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড |
ইসলামী ব্যাংক কি সরকারি ব্যাংক?
বাংলাদেশে সর্বমোট ১০ টি ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে। এদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের (Islamic Banking) বৈশিষ্ট্য
বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আমানত সঞ্চয়কারী, ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহীতার সম্পর্ক দাতা এবং গ্রহীতার। ঋণ গ্রহীতা তার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে লাভ বা লোকসান যাই করে না কেন সুদের হার পূর্বনির্ধারিত। সঞ্চয়ের হারও পূর্ব নির্ধারিত থাকে। ব্যাংকের লাভ লোকসানের সাথে গ্রাহকের লাভক্ষতির কোনো সম্পর্ক থাকেনা।
অপরদিকে, ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সঞ্চয়কারী ও ব্যাংকের লাভ ও লোকসানের সম্পর্ক খুব নিবিড় ভাবে জড়িত থাকে। যদি কোনো কারণে ইসলামী ব্যাংক তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় তবে ইসলামী ব্যাংক যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। নিচে ইসলামী ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
- ব্যক্তিগত স্বার্থ নয় সমষ্টির কল্যাণঃ ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখা হয় না কিন্তু ইসলামী ব্যাংকে সামাজিক কল্যাণকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অসচ্ছল ও বিত্তহীনদের জন্য বিভিন্ন প্রকারের বিনিয়োগের মাধ্যম সৃষ্টি করা। পর্যায়ক্রমে তাদের উন্নতি সাধন করা ইত্যাদি ইসলামী ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য।
- সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমন্বয়ঃ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব তখনই যখন ঐ দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো। ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) আইন অনুযায়ী প্রতিটি ইসলামী ব্যাংক সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় মূল্যবোধ সমন্বয়, বহুমুখী ও গতিশীল উন্নয়নকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। সামাজিক উন্নয়নই একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি। ইসলামী ব্যাংক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে একত্রিত করে দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
- নৈতিক শৃঙ্খলার বিধান অনুসরণঃ ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) ব্যবস্থাপনায় আরোও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইসলামের নৈতিক শৃঙ্খলার বিধান অনুসরণ করা। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার নৈতিক বিধানের সার সংক্ষেপ হলো –
ক) সব সম্পদের মালিক নিরঙ্কুশ আল্লাহ্। মানব সমাজ ট্রাস্টি হিসেবে আল্লাহ্র আদেশ ও বিধান মেনে সে সম্পদ অর্জন ও ব্যবহার করবে।
খ) মানব সমাজ আল্লাহ্ প্রদত্ত সম্পদ ব্যবহার করবে ইহকালীন ও পরকালীন ‘হাসানাহ’ ও ‘ফালাহ’ (সুন্দর ও কল্যাণ) আহরণের জন্য।
গ) তারা তথা মানব সমাজ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ‘আদল’ ও ‘ইহসান’ (ন্যায়বিচার ও দয়া) অনুশীলন করবে।
ঘ) মানব সমাজ ‘মারুফ’ বা কল্যাণমূলক ইনস্টিটিউশন কায়েম করবে। সমাজকে ‘মুনকার’ বা অকল্যাণমূলক সব বোঝা-বন্ধন ও কষ্ট-যাতনা থেকে মুক্ত করবে। এভাবে মানুষের জীবন ভারমুক্ত ও সহজ করবে। - বিনিয়োগে অংশীদারিত্বের নীতিঃ ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক গুলো লাভ লোকসান সকল ক্ষেত্রে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয় লাভ – লোক্সানে অংশ নিয়ে থাকে। এ ধরণের ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ই সাফল্য ও ব্যর্থতায় এক সুতোয় বাধা থাকে। ফলে গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক বজায় থাকে।
- টাকার কারবার নয়, পণ্যের ব্যবসাঃ ইসলামী ব্যাংক কখনো টাকার কারবার করে না কিন্তু ইসলামী ব্যাংক মুরাবাহা, বায়-ই-মুয়াজ্জল, বায়-ই-সালাম, ইজারা, ভাড়ায় ক্রয় ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে। পণ্যের কেনাবেচা কিংবা ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে এসব বিনিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। পণ্য ক্রয় বিক্রয় করার মাধ্যমে অর্জিত অর্থের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লাভরূপে গণ্য হয়।
- মুদ্রাস্ফীতি দূর করাঃ মুদ্রাস্ফীতি দূর করা বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ। কিন্তু অন্যান্য ব্যাংক গুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মুদ্রাস্ফীতি দূর করতে সহায়তা করে। ইসলামী ব্যাংক সুদবিহীন হওয়ায় সেখানে টাকার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না। তাই সেখানে প্রকৃত অর্থনৈতিক কার্যক্রম ছাড়াই নির্দিষ্ট হারে মুদ্রার প্রবৃদ্ধি কমে যায়। ফলে বাজারে অর্থের জোগান কমে যায়। কেননা, ইসলামী ব্যাংক পণ্য বিনিয়োগ ভিত্তিক হওয়ায় অর্থের যোগান কম থাকে ফলে মুদ্রাস্ফীতি কমে যায়।
- বেকারত্ব রোধ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ বেকারত্ব দূর হয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংক অত্যাবশ্যকীয়, উৎপাদনমূলক, শ্রমনির্ভর এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে। ফলে দেশের বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এই ব্যাংকের আরোও একটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো সমাজের কম বিত্তবান ও বেকারদেরকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
- দাতা-গ্রহীতা নয়, অংশীদারিত্বের সম্পর্কঃ সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যাংকারদের দাতা গ্রহীতার সম্পর্ক থাকে। কিন্তু, ইসলামী ব্যাংক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। কেননা, ইসলামী ব্যাংক তাদের ঋণ গ্রহীতাকে পণ্য বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়। ফলে সকল প্রকার লাভ -ক্ষতি ব্যাংক ও গ্রাহকদের উপর বর্তায়।
- ইসলামী শরিয়াহ্ নীতি অনুসরণঃ ইসলামী ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগ ইসলামী শরিয়াহ্ মোতাবেক করে থাকে। ইসলামী শরিয়াহ্ অনুযায়ী সমাজে দুর্বল ব্যক্তিদের হাত ধরে সবল করাই ইসলামী শরিয়াহ্ নীতির অংশ।
- লোভ নয়, প্রয়োজন পূরণঃ মানুষের স্বভাবসম্মত আর্থিক লেনদেনের সহজ প্রক্রিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালিত হয়। জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হওয়াই এ ব্যাংকের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, নীতি ও কর্মধারা বিদ্যমান। গুটিকতেক মানুষের লোভের চাহিদা পূরণে কাজ না করে সমাজের সব মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে আর্থসামাজিক সুবিচার কায়েমে ইসলামী ব্যাংক কাজ করে। আর্থসামাজিক লক্ষ্য অনুসরণ করে দেশের ভারসাম্যপূর্ণ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো। জনকল্যাণধর্মী, উন্নয়নমুখী এই ভূমিকার মাধ্যমে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম এরই মধ্যে জনগণের ব্যাপক আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ২৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
উপরের আলোচনায় আমরা ইসলামী ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করলাম। মূলত, ইসলামী ব্যাংকিং (Islamic Banking) খাত সম্পর্ণ সুদমুক্ত একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা। এখানে বিভিন্ন প্রকারের পণ্য বিনিয়োগ করে অংশীদারিত্বের ভূমিকা পালন করে ইসলামী ব্যাংক গুলো। ফলে দেশ ও দশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকে সুদ কেন নিষিদ্ধ?
অন্যান্য একেস্বরবাদী ধর্মের মতো ইসলাম সুদের নিন্দা এবং একে নিষিদ্ধ করেছে। কঠোর এবং সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
আল-কোরআনে বলা হয়েছে, “অথচ আল্লাহতায়ালা (কেনাবেচাকে বৈধ করেছেন এবং সুদ করেছেন নিষিদ্ধণ)” এবং “আল্লাহতায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন।” এবং “হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যেসমন্ত বকেয়া আছে তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো । অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও”। আল-কোরআনে আর কোন গুনাহের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের তরফ থেকে এমন যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়নি!
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর হাদিসে সুদের নিন্দা জানিয়ে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে এবং একে এমন এক মারাত্মক গুনাহের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে যা আল্লাহ’র ক্রোধ উদ্রেক করে । একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, এর লেখক ও এবং এর সাক্ষীদের উপর আল্লাহ’র অভিশাপ।”
সুদ-এর আরবি শব্দ রিবা । যার অর্থ হলো অনুপার্জিত লাভ বা বৃদ্ধি । কিন্তু কোরআনে রিবা বলতে কোন ধরনের বৃদ্ধির কথা বলা হয়নি । এখানে বিশেষ ধরনের লেনদেনকে বুঝানো হয়েছে । আল-কোরআন নাজিলের সময় আরব এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত এক বিশেষ ধরনের লেনদেনকেই বুঝানো হয়েছে ‘রিবা’ দিয়ে।
কোরআনে সুনির্দিষ্ট “আর্টিকেল” দিয়ে রিবা-র বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে । রিবা-এর মানে হলে শ্রোতাদের জানা আছে এমন সুনির্দিষ্ট ধরনের লেনদেন। এটা দু’পদ্ধতির যেকোন একভাবে সম্পাদন করা হয়। ইতোমধ্যে বিদ্যমান এমন খণ বিলম্বিত করা এবং খণকে একটি নতুন পরিপক্তার দিকে এমনভাবে নিয়ে যাওয়া যেন খণের অংক বৃদ্ধি পায় । অথবা, এমনভাবে খণ দেয়া যেন ভবিষ্যতে কোন সময়ে তা একটি বৃদ্ধিসহ পরিশোধ করা হয় । অন্য কথায় “রিবা” হলো সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খণগ্রহণকারীর কাছে ণপ্রদানকারীর অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকা।
এই উপলব্ধি কোরআনের বর্ণনাতেই উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে: “কিন্ত, যদি তোমরা তওবা করো, তবে তোমরা নিজের মূলধন ফেরত পেয়ে যাবে। তোমরা কারো প্রতি অন্যায় করো না এবং তোমাদের প্রতিও অবিচার করা হবে না ।” কোরআনের এই আয়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে।
প্রথমত, এতে খণ বা কর্ষের উপর যে কোন ধরনের বৃদ্ধিকেই রিবা হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এবং দ্বিতীয়ত এতে ওই ধরনের বৃদ্ধিকে অবিচার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, লাভ বা মুনাফাও এক ধরনের বৃদ্ধি, যা কোন পণ্যের মূল্যের উপর অর্জিত হয়ে থাকে । এই মুনাফা গ্রহণের বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে আরেকটি আয়াতে ২:২৭৫: “কিন্তু আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ করেছেন ।”
আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রিবা হলো: সময়ের সাথে সাথে খণ-এর মূলের উপর যে কোন ধরনের বৃদ্ধি, এটাই হলো সুদ ।’ আইনগত এবং আর্থিক উভয় ক্ষেত্রে সুদকে অতিরিক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যা খণ গ্রহীতা ঝণদাতাকে বণ প্রদানের জন্য পরিশোধ করেন অথবা বিদ্যমান খণ পরিপক্কতার সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য পরিশোধ করেন । শরী’আহ্ এ ধরনের বৃদ্ধি বা এর কোন প্রতিরূপ অনুমোদন করে না । তাই, কোন খণ দেয়া হলে তার আসলের উপর যে কোন ধরনের বাড়তি পরিশোধই হলো সুদ এবং কোরআনের ভাষায় সুস্পষ্টভাবে “সুদ নিষিদ্ধ” ।
শেষকথা
এই অনুচ্ছেদে আমরা ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করলাম। পরিশেষে বলা যায়, ইসলামী ব্যাংকিং Islamic Banking ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ইসলামিক শরিয়াহ্ অনুযায়ী ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে। এই ব্যাংক গুলো মূলত টাকা ও পয়সার লেনদেন থেকে বিরত থাকে, গ্রাহককে বিভিন্ন প্রকারের পণ্য বিনিয়োগ করে। এর ফলে ইসলামী ব্যাংক অংশীদারিত্বের মাধ্যম সৃষ্টি করে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পরিচালনা করে আসছে।